রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের দুই বছর, বেড়েছে সচেতনতা, প্রতিকার পাচ্ছে ভুক্তভোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পবা উপজেলার সুমীর (ছদ্ম নাম) মাদ্রাসার সহপাঠি সাফিউল ইসলাম সাফি। সুমীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে সাফি ফেসবুকে একটি ভুয়া আইডি খোলেন এবং সেই আইডি থেকে ভিবিন্ন ব্যক্তিকে ম্যাসেঞ্জারে রত্নার ছবি প্রেরণ কর হয়। বিষয়টি জানার পর সুমী নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পবা থানায় অভিযোগ করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি রাজশাহীর সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে ওঠে। সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সাফিকে সাজা প্রদান করা হয়। সুমী জানান, তিনি এই আদালত থেকে দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি জন্য ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত। দীর্ঘ দুই বছরে এই আদালতে ৫৭৩টি মামলা এসেছে। যার মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
সারা দেশে ৮টি সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত রয়েছে। এসব আদালতের মধ্যে মামলা বেশি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের আদালতে। আর সব চাইতে কম বিচারাধিন মামলা আছে রাজশাহীর এই আদালতে।
প্রতিষ্ঠার পর রাজশাহী সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা হয়েছে ৫৭৩টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৬৬টির। নিষ্পত্তির হার ৮১.৩৩ শতাংশ। বিচারাধীন আছে ১০৭টি। এই ১০৭ টি মমালার মধ্যে তদন্ত পর্যায়ে আছে ৪১ টি এবং সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে ৬৬ টি মামলা। এদিকে এই ৫৭৩ টি মামলার মধ্যে সাক্ষী নেয়া হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ জনের। রাজশাহী সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতের শুরু থেকেই বিচারক মো. জিয়াউর রহমান।
সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতের পিপি ইসমত আরা বলেন, একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে গড়ে সময় লাগছে ৩ মাস। আদালতের তথ্য অনলাইনেই মেলে। কোন মামলার ডেট কবে, সাক্ষী গ্রহণ কবে তা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকেই দেখা যাবে ‘আমার আদালত’ নামের এ্যাাপ থেকে। সারা দশের অন্যান্য আদালতের তুলনায় আমাদের এই আদালতে মামলার হার প্রতি মাসে কমে আসছে। এটা রাজশাহী সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতের সাফল্য।
এই আইনজীবী আরও জানান, যারা সাইবার অপরাধে প্রথমবারের আসামী তদের ক্ষেত্রে আদালত সহশীল আচরণ দেখিয়ে আসছে। আদালত এই ধরণের আসামীদের প্রবেশনের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তারা নিজেদের সুধরে নিতে পারেন। প্রবেশনে থাকাদের আদালত মুক্তিযুদ্ধের বই পড়া, বৃক্ষরোপন সহ কেউ যাতে সাইবার অপরাধে না জড়ায় সেই জন্য প্রবেশনে থাকাদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে আসামীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছে। যা দেখে সমাজের অন্যরাও এই ধরণের অপরাধ থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্র অনেকে না বুঝেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের প্রথম অপরাধ হওয়ায় আদালত তাদের যুক্তি বিচার সাপেক্ষে সুধরাবার সুযোগ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *