নতুন জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কেএনএফ

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে’ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কয়েকমাস আগে ঘরছাড়া বেশ কয়েকজন তরুণ পাহাড়ে গিয়ে কেএনএফের কাছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা দাবি করেন তিনি।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, গত আগস্ট মাসে কুমিল্লা থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে একযোগে সাত তরুণ ঘর ছেড়ে বের হওয়ার ঘটনায় সিটিটিসি আবরুর হক আবরার নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে। জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতেই তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। আর এই আবরারকে শাকির বিন ওয়ালী নামে এক চিকিৎসক ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর সেই চিকিৎসককেও গ্রেফতার করা হয়। এই শাকির বিন ওয়ালী হচ্ছেন নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়া বিভাগের প্রধান।

সিটিটিসি প্রধান আরও জানান, শাকির বিন ওয়ালী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পড়াশোনা করেছেন। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও আরেক হুজুরের নির্দেশে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করতেন। সেই সঙ্গে তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য। পাশাপাশি তিনি ঢাকা থেকে দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে আহত ঘরছাড়া তরুণদের চিকিৎসা দিতেন।

Arrestনতুন জঙ্গি সংগঠনের মূল হোতা শামিন ও কুকি-চিনের প্রধান নাথান বোম সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়ে কাউন্টার টেররিজমের এই কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসক শাকির, কৃষিবিদ মহসিন ও রক্সি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শামিন মাহফুজ ২০০৬ সাল থেকে পাহাড়ি এলাকাকে কেন্দ্র করে একটি জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করারা জন্য পরিকল্পনা করে আসছিলেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে যখন সে জামিনে বের হয়ে আসে, তখন সে পাহাড়ি এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুঁজতে থাকে। পরে সে জানতে পারে পাহাড়ি এলাকায় কুকি-চিন নামে একটি সংগঠন আছে। সেই সংগঠনটির প্রধান হলেন নাথান বোম। নাথান বোম হচ্ছেন শামিন মাহফুজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আরও জানান, শামিন মাহফুজ ও নাথান বোম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এছাড়া শামিন একটি ক্যাডেটে কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সে মেধাবী তালিকায় স্থান করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে। পরে নাথাং বোমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শামিন তাকে তার সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তাব দেন। এরপর নাথান বোম শামিনকে জানায়, তারা অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে মিলিত হয় তারা। ওই মিটিংয়ে শামিন, রক্সি, মসীন এবং বিকাশসহ তমাল নামে আরেকজন উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও কুচিনের পক্ষ সেই মিটিংয়ে নাথান বোম ও তার দুই সহযোগী উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, মিটিংয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত হলে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবিরে কাটআউট পদ্ধতিতে যাওয়া শুরু করে। আর চিকিৎসক শাকির বিভিন্ন সময়ে এই প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করেন।

সিটিটিসি প্রধান আরও জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানতে পেরেছি, তারা পার্বত্য অঞ্চলকে প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- যেন তাদের সদস্যদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা বজায় থাকে। প্রাথমিকভাবে তাদের উদ্দেশ্য যেটা বোঝা যাচ্ছে, সেটা হলো- তারা পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সমতল ভূমিতে এসে হামলা করে যেন নিরাপদে আবারও পার্বত্য অঞ্চলের ক্যাম্পে ফিরে যেতে পারে। তবে সংগঠনটির অর্থের অনুদান কোথা থেকে আসে এবং তাদের এই নেটওয়ার্কের বাইরে অন্য কোনো নেটওয়ার্ক আছে কি-না বা তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কি ছিল- তা আমরা সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ড শামিন মাহফুজকে গ্রেফতার করলে জানাতে পারব। তবে তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল, তা সিটিটিসি কিছুটা হলেও নস্যাৎ করতে পেরেছে বলেও দাবি করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *