অবশেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্ট দেশে যেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বসবাসরত প্রবাসীরা প্রথমে এই সুযোগ পাচ্ছেন। তবে কেবল বৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদেরই এই সুযোগ দেওয়া হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধনপূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান’ বিষয়ে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটি’ সম্প্রতি এক সভা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে (অব.) মো. আহসান হাবিব খান সভায় উপস্থাপিত মতামত ও সুপারিশগুলো অনুমোদনের জন্য কমিশন বৈঠকে উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সরকারের কৃচ্ছতা সাধন নীতির কারণে আরব আমিরাতে নিজস্ব কোনো টিম পাঠাবে না ইসি। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই অপারেটর নিয়োগ করে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এরপর দেশের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন যাচাই শেষে দেওয়া হবে এনআইডি। প্রথমবার কোনো ফি নাগরিকদের না দিতে হলেও দূতাবাসকে এনআইডি প্রতি ৫০ দিরহাম (প্রতিবেদন প্রকাশের দিনে ১ দিরহাম সমান ২৮ দশমিক ৬৬ টাকা) সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আবেদনকারীর নাম হতে হবে জন্ম নিবন্ধন অথবা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী।
পুরো কার্যক্রমের জন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর কর্তৃক দূতাবাস/মিশন থেকে পাসপোর্ট ইস্যু/রিইস্যুর ক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতি অনুসারে কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়।
এদিকে রোহিঙ্গা বা বিদেশিদের এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ঠেকাতে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ এলাকা ও বিশেষ কমিটি সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রবাসে বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
সভার কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ‘প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ তৈরি করেন। ওই নীতিমালায় পুরো কার্যক্রম ইসির নিজস্ব টিম কর্তৃক পরিচালনা করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত রয়েছে। যেহেতু সরকারের বর্তমান কৃচ্ছতা সাধন নীতির আলোকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্তৃক ইসির নিজস্ব টিম পাঠানোর বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেজন্য দূতাবাস কর্তৃক নিয়োগকৃত অপারেটরদের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রির কাজটি করা হতে পারে। তবে কারিগরিভাবে ওই অপারেটরদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃতব্য ল্যাপটপে তাদের বায়োমেট্রিক লগ-ইন, নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও মনিটরিংয়ে নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ের জন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাত/সংশ্লিষ্ট দেশে সফরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ সেন্ট্রাল ডাটাবেইজের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে আইডিইএ প্রকল্প-২ এর সহায়তা নিয়ে এনআইডি উইংয়ের কারিগরি অধিশাখা উদ্যোগ নেবে। সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত কার্যক্রমের সময়কাল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে এরপর রেমিট্যান্স প্রবাহের আধিক্য বিবেচনায় বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুরোতে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাপক আকারে শুরুর সুপারিশও করেছে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটি’।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এই উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। তবে মহামারি কেটে গেলেও সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু হওয়া ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হয়ে এনআইডি পেতে আবেদন করেছেন পাঁচ হাজার ১৩৮ জন। এদের মধ্যে চার হাজার ৬১০ জনের আবেদন এখন পর্যন্ত তদন্তই করেনি ইসি। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আবেদনে জমছে ধুলোর স্তর। আর তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৭৫ জনের, এর মধ্যেও আবার নানা কারণ দেখিয়ে ২০৩ জন প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তাধীন রয়েছে ৫৩ জনের আবেদন। অর্থাৎ তিন বছরে তদন্ত সম্পন্ন করে ২৭২ জনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে, যারা পাচ্ছেন এনআইডি।
গত তিন বছরে ইউএই থেকে আবেদন এসেছে এক হাজার ৩৭৫টি, এরমধ্যে তদন্ত হয়নি এক হাজার ২৫৪টির, আর অনুমোদন হয়েছে মাত্র ৬৩ জনের আবেদন।
আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস-আইডিইএ (স্মার্ট এনআইডি) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে বলেন, চলতি বছর কার্যক্রমটির জন্য ৪০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।