নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার আন্দোলনের বার্তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আন্দোলনের বার্তা নিয়ে পুরো রমজান মাস দেশজুড়ে ইফতার মাহফিল করেছে দলের বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঈদের সময়টিও কাজে লাগানো হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না—এমন বক্তব্য দিয়ে আসছে বিএনপি। আগামী মাস থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও যাচ্ছে না দলটি। তার পরও ঈদকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এমন নেতারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উৎসবকে কাজে লাগাতে চান।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যাঁরা এলাকায় আর ঈদ করতেও যাননি, তাঁরাও এবার বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে নিজ এলাকায় ঘুরেও এসেছেন। ঈদের ছুটিতে আবার যাবেন। যেসব এলাকায় একাধিক প্রভাবশালী নেতা প্রার্থী হওয়ার মতো আছেন, সেসব সংসদীয় আসনে পাল্টাপাল্টি শোডাউনও করা হচ্ছে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এমন একাধিক বিএনপি নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখনই বলা যায় না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। তাঁরা বলেন, সরকারের শেষ সময়ে নানা মেরুকরণ চলতে থাকে। নির্বাচনে যাওয়ার পথও খুলে যেতে পারে। তাই নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ করাটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ঈদের সময় নিজ এলাকায় যাবেন নেতা-কর্মীরা, এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, দেশে নানা সংকট চলছে। মানুষ কষ্টে আছে। তাই সংকট উত্তরণে নেতা-কর্মীরা আন্দোলনের বার্তা নিয়ে ঈদ করতে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।
স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দলীয় কর্মসূচি হিসেবে চলা ইফতার মাহফিলগুলোতে শেষ মুহূর্তে ঈদের আমেজ চলে এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ছে ঈদের শুভেচ্ছাসংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। অনেক তরুণ নেতা এবার ঈদ ঘিরে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অনেকে নিজ এলাকায় গিয়ে জাকাতের কাপড়, নগদ টাকাসহ ঈদ উপহার তুলে দিচ্ছেন দুস্থদের হাতে। কেউ কেউ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঈদ উপহার পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ঢাকায় ঈদ করে এলাকায় যাবেন কেউ কেউ : বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজন ঢাকায় ঈদ করে নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। ঢাকার আশপাশের জেলার নেতার বেশির ভাগ ঢাকায় ঈদ করে তারপর নির্বাচনী এলাকায় যাবেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদের পর তিনি নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও যাবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদের দিন যাবেন নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার দাউকান্দিতে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকায় ঈদ করবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন যাবেন নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জে।
বিএনপির মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবনে থাকছেন ঈদের দিন। তাঁর সঙ্গে ঈদ করতে দেশে আসছেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। বরাবরের মতো এবার ঈদের দিন সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
ঈদের দিন সকাল ১১টায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন।